নগদ টাকার যাকাত হিসাব করার নিয়ম
নগদ টাকার যাকাত হিসাব করার নিয়ম নিয়ে আজকে আলোচনা করব। কারণ আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা নগদ টাকার যাকাত হিসাব করার নিয়ম সম্পর্কে জানেনা। সঠিকভাবে ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম স্তম্ভ যাকাত আদায় করার জন্য নগদ টাকার যাকাত হিসাব করার নিয়ম সম্পর্কে আমাদের জানতে হবে।
আপনি যদি নগদ টাকার যাকাত হিসাব করার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চান তাহলে সম্পূর্ণ আর্টিকেল মনোযোগ সহকারে পড়ুন। তাহলে চলুন দেরি না করে নগদ টাকার যাকাত হিসাব করার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
পেজ সূচিপত্রঃ নগদ টাকার যাকাত হিসাব করার নিয়ম
- নগদ টাকার যাকাত হিসাব করার নিয়ম
- নগদ যাকাত ক্যালকুলেটর
- সর্বনিম্ন কত টাকা থাকলে যাকাত দিতে হবে
- যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত সমূহ
- শেষ কথা
নগদ টাকার যাকাত হিসাব করার নিয়ম
ইসলামের মূল পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম হলো যাকাত। আমরা জানি যে ঈমানের পরে নামাজ, তারপরে যাকাতের অবস্থান। আল্লাহ তা'আলা এ বিষয়ে বলেছেন, "আপনি তাদের সম্পদ থেকে সাদকা গ্রহণ করুন এর দ্বারা আপনি তাদের কে পবিত্র করবেন ও পরিশোধিত করবেন, আপনার দোয়া তাদের জন্য স্বস্তিদায়ক, আল্লাহ সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞ।"{ সুরা তাওবাঃ ১০৩}
আরো পড়ুনঃ প্রসাবে জ্বালাপোড়া হওয়া কি কিডনি রোগের লক্ষণ
যাকাত দেওয়ার জন্য আমাদেরকে অবশ্যই নগদ টাকার যাকাত হিসাব করার নিয়ম সম্পর্কে জানতে হবে। কারণ সম্পর্কে পবিত্র করার জন্য যাকাত সঠিক পরিমাণে দিতে হবে। একজন মুসলিমের জন্য পরিমাণে কম যাকাত দেওয়া উচিত নয়। সেই পরিপ্রেক্ষিতে নগদ টাকার যাকাত হিসাব করার নিয়ম সম্পর্কে জানা জরুরী।
যদি আপনার কাছে সোনা ৭.৫ তোলা অর্থাৎ ৯৫.৭৪৮ গ্রাম থাকে এবং রুপা ৫২.৫ তোলা অর্থাৎ ৬৭০.২৪ গ্রাম থাকে তাহলে আপনার উপর যাকাত ফরজ হবে। দেশি-বিদেশি মুদ্রা বা ব্যবসায়িক পণ্যের নিসাব নির্ধারণে সোনা রুপা হলো পরিমাপক। এক্ষেত্রে ফকির-মিসকিনদের জন্য যেটি বেশি লাভজনক হবে সেটি পরিমাপ হিসেবে গ্রহণ করায় শরীয়তে নির্দেশ করা হয়েছে।
মুদ্রা এবং পণ্যের বেলায় বর্তমানে রুপার নিসা পরিমাপক হিসেবে গণ্য হবে। অর্থাৎ যার কাছে ৫২.৫ তোলা সমমূল্যের দেশ-বিদেশী মুদ্রা বা ব্যবসায়িক পণ্য মজুদ থাকবে তার ওপর যাকাত ওয়াজিব হয়ে যাবে। আপনার যে সম্পদের উপর যাকাত ফরজ হয়ে যাবে তার ৪০ ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ ২.৫ শতাংশ যাকাত দেওয়া ফরজ।
কোন ব্যক্তির কাছে যদি সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ অথবা তার পরিমাণ মূল্য অথবা ৫২.৫ ভরি রুপা অথবা তার পরিমাণ মূল্য থাকে তাহলে সেই ব্যক্তির উপর যাকাত ফরজ হবে। এখানে একটি বিষয় জানতে হবে যে ব্যক্তি রুপার হিসাব অনুযায়ী যাকাত দিবে কিনা স্বর্ণের হিসাব অনুযায়ী যাকাত দিবে সে বিষয়টি তার ওপর নির্ভর করে।
নগদ যাকাত ক্যালকুলেটর
আমাদেরকে সঠিকভাবে যাকাত আদায় করতে হলে নগদ যাকাত ক্যালকুলেটর সম্পর্কে জানতে হবে। আমি যেন ইসলামের এই স্তম্ভটিকে সঠিকভাবে পালন করতে পারি এবং আমাদের সম্পর্কে পবিত্র করতে পারি সেই জন্য নগদ যাকাত ক্যালকুলেটর নিচে উল্লেখ করা হলো।
১। নগদ অর্থ, ব্যাংকে জমা টাকা, ব্যবসায়িক পণ্য -- ৫২.৫ তোলা রুপার সমপরিমাণ -- ২.৫ শতাংশ হারে যাকাত দিতে হবে।
২। স্বর্ণ, রূপা, স্বর্ণের কোন অলংকার -- ৭.৫ ভরে সমপরিমাণ মূল্য -- ২.৫ শতাংশ হারে যাকাত দিতে হবে।
৩। কৃষি জাত পণ্য -- আবু হানিফা এর মতে, যে কোন পরিমাণ -- বৃষ্টিতে উৎপাদিত দ্রব্যের ১০ শতাংশ দিতে হবে।
আরো পড়ুনঃ হঠাৎ শুকনো কাশি হলে কি করবেন
৪। ভেড়া -- ৪০-১২০ টি থাকে তাহলে -- ১ একটি ভেড়া
৫। ছাগল -- ১২১-২০০ টি থাকে তাহলে -- ২ টি ভেড়া বা ছাগল
৬। গরু মহিষ -- ৩০-৩৯ টি থাকে তাহলে -- ১ টি গরু বা মহিষ দিতে হবে।
সর্বনিম্ন কত টাকা থাকলে যাকাত দিতে হবে
আমরা অনেকেই সর্বনিম্ন কত টাকা থাকলে যাকাত দিতে হবে এ বিষয়টি জানিনা। যার কাছে সাড়ে ৫২ ভরি রূপা বা এর সমমূল্যের দেশি-বিদেশি টাকা বা ব্যবসায়িক পণ্য মজুদ থাকবে, তার ওপর যাকাত ওয়াজিব হবে। যে সম্পদের ওপর যাকাত ওয়াজিব, তার ৪০ ভাগের এক ভাগ ২.৫ শতাংশ যাকাত দেওয়া ওয়াজিব।
বর্তমান বাজারে ভরি প্রতি রূপার মূল্য ৭৫০ টাকা। মানভেদে কিছু কম বা বেশিও হয়। তাই আনুসাঙ্গিক বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে রূপার মূল্য ভরি প্রতি মোটামুটি ৭৬২ টাকা ধরে সাড়ে ৫২ ভরি রূপার মূল্য আসে ৪০,০০৫ টাকা। যাকাত দেওয়ার পূর্বে নগদ টাকার যাকাত হিসাব করার নিয়ম জেনে যাকাত দিতে হবে।
যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত সমূহ
আপনার উপর যাকাত ফরজ হয়েছে কিনা এটি কিভাবে বুঝবেন? যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত রয়েছে। যদি সেই শর্তগুলো আপনার সাথে মিলে যায় তাহলে আপনাকে বুঝতে হবে আপনার উপর যাকাত ফরজ হয়েছে। চলুন যাকাত ফরজ হওয়ার শর্তসমূহ জেনে নেওয়া যাক।
১। সম্পদের উপর পূর্ণ মালিকানা থাকতে হবে।
২। সম্পদ উৎপাদন ক্ষম বা বর্ধনশীল হতে হবে।
৩। আপনার কাছে হিসাব পরিমান সম্পদ থাকতে হবে।
৪। আপনার কাছে যদি হিসাব পরিমাণ সম্পদ সম্পূর্ণ এক বছর থাকে তাহলে ওই সম্পদের উপর যাকাত দিতে হবে।
আরো পড়ুনঃচোখে শসা দিলে কি হয়
৫। সারা বছরের আপনার প্রয়োজন মেটানোর পরে অতিরিক্ত সম্পদ থাকলে শুধু যাকাত ফরজ হবে।
৬। যাকাত ফরজ হওয়ার অন্যতম মূল শর্ত হল ঋণমুক্ত হওয়া। যদি কারো উপর ঋণ থাকে তাহলে তার ওপর যাকাত ফরজ হবে না।
নগদ টাকার যাকাত হিসাব করার নিয়মঃ শেষ কথা
নগদ যাকাত ক্যালকুলেটর, নগদ টাকার যাকাত হিসাব করার নিয়ম, যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত সমূহ, সর্বনিম্ন কত টাকা থাকলে যাকাত দিতে হবে? বিষয়গুলো বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। প্রিয় বন্ধুরা আশা করি আপনারা উক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের অবশ্যই এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো জানা উচিত।
এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এরকম গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল আরো পড়তে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করুন। কারণ আমাদের ওয়েবসাইটের নিয়মিত এরকম আর্টিকেল পাবলিশ করা হয়। ১৬৮৩০