রক্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কী কী জটিলতা হতে পারে

আপনারা কি রক্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কী কী জটিলতা হতে পারে সে সম্পর্কে জানতে চান? তাহলে আমাদের আজকের এই পোস্টটি আপনাদের জন্য। জীবন বাঁচাতে রক্তের অবদান অপরিসীম। আজকে আমরা আলোচনা করব রক্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কী কী জটিলতা হতে পারে, কারা আদর্শ রক্তদাতা ও রক্ত নেয়ার ক্ষেত্রে আমাদের কি করা উচিত সে সম্পর্কে।
তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নেই, রক্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কী কী জটিলতা হতে পারে সে সম্পর্কে।

সূচিপত্রঃ রক্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কী কী জটিলতা হতে পারে

রক্ত কি?

রক্ত হচ্ছে এক প্রকার প্রাকৃতিক কলরয়েড যা মূলত তরল ও কঠিন পদার্থের সমন্বয়ে গঠিত। দেহের ভেতরে অসচ্ছ যে লাল পদার্থ আমাদের দেহের ধমনী বা শিরার ভেতর দিয়ে বাহিত হয়ে দেহের সকল টিস্যু বা কোষে খাবার ও অক্সিজেন পৌঁছে দিয়ে থাকে তাই হচ্ছে রক্ত। আমরা সবাই এটা জানি যে রক্তের রং লাল। আমাদের দেহের বিভিন্ন গ্রন্থি হতে এটা নিঃসরিত হরমোন দেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে পৌঁছে দিয়ে থাকে। সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কর্মক্ষমতা এর ফলে নিশ্চিত হয়।

রক্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কী কী জটিলতা হতে পারে

আজকের আর্টিকেলে আমরা রক্ত নেয়ার ক্ষেত্রে কি কি জটিলতা হতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করব। চোখ কিংবা হাত পা ছাড়াও বেঁচে থাকার সম্ভব হলেও রক্ত ছাড়া বেঁচে থাকার কথা কল্পনাতেও আনা যায় না। সেজন্য মানবদেহে রক্ত অপরিহার্য। জীবন রক্ষার অন্যতম উপায় কখনো কখনো রক্ত পরিসঞ্চালনের তৈরি করতে পারে জটিলতা। রক্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কী কী জটিলতা হতে পারে নিচে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো।

  • এখনো একটা প্রধান সমস্যা হচ্ছে রক্ত বাহিত রোগের সংক্রমণ। রক্তগ্রহীতার দেহে খুব সহজেই হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি ও এইডস সহ বিভিন্ন প্রাণঘাতী জীবাণু রক্তের মাধ্যমে প্রবেশ করতে পারে। এই পরিস্থিতি এই মূল কারণ হচ্ছে রক্ত পরিসঞ্চালনের পূর্বে রক্তটা জীবাণুমুক্ত কিনা সেটা যথা যথ ভাবে পরীক্ষা না করা। এসব রক্ত অনুমোদনহীন বিক্রি করা হয়ে থাকে। আর মূলত এই সকল রক্ত আসে নেশা সক্ত পেশাদার রক্তদানকারীদের কাছ থেকে। এছাড়াও ভেজাল রক্ত বা মেয়াদ উত্তীর্ণ রক্ত ও এ সকল ব্লাড ব্যাংক থেকেই এসে থাকে।
  • ভুলক্রমে এ গ্রুপের রক্ত অন্য গ্রুপের রোগীকে দিলে রক্ত প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে। এইরকম ঘটনা কম হলেও একেবারেই যে হয় না সেটা কিন্তু নয়। এ সকল ক্ষেত্রে রক্ত পরীক্ষা কারী ও সংগ্রহকারী ব্লাড ব্যাংক, নার্স কিংবা চিকিৎসক যে কারো ভুল বা অসতর্কতা দায়ী। সাধারণত রোগী বুকে বা পিঠে ব্যথা ও শ্বাসকষ্টের অভিযোগ করেন। চিকিৎসক দ্রুত ব্যবস্থা নিলে পরবর্তী জটিলতা থেকে রক্ষা পেতে পারে। এছাড়াও যে কোন অপরি সঞ্চালনেই জ্বর ও কা আপনি আশা এবং এলার্জির মতো ছোট ছোট সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • কিছুদিন পরপর যাদেরকে রক্ত নিতে হয়, তাদের দেহে লৌহের আধিক্য সহ বিভিন্ন সমস্যা হয়ে থাকে।
  • অনেক সময় অনেক রক্ত তাড়াতাড়ি প্রবেশ করলে হৃদরোগী ও বৃদ্ধর হার্ট ফেইলিওর জাতীয় সমস্যা হয়ে থাকে।

কারা আদর্শ রক্তদাতা

রক্ত দেয়া নেয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা হতে পারে। তাই সব সময় আদর্শ রক্তদাতা বাছাই করে রক্ত নেয়া উচিত। তাই নিচে কয়েকটা আদর্শ রক্তদাতার বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হলো।

  • যাদের বয়স ১৮ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে তাদেরকে আদর্শ রক্তদাতা হিসেবে ধরা হয়ে থাকে।
  • ওজন কমপক্ষে ১০০ পাউন্ড বা ৪৫ কেজি।
  • মানসিক ও দৈহিকভাবে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ও ইচ্ছাকৃত ভাবে রক্ত দিতে আগ্রহী ব্যক্তি।
  • প্রতি মিনিটে নাড়ির গতি ৬০ থেকে ১০০ এর মধ্যে থাকতে হবে।
  • অবশ্যই দেহের তাপমাত্রা স্বাভাবিক অর্থাৎ 99.6 ফারেনহাইট এর মধ্যে থাকতে হবে। জ্বর বা অসুস্থ অবস্থাতে রক্ত দেয়া যাবে না।
  • ওষুধ ছাড়া স্বাভাবিক মাত্রার ভিতরে রক্তচাপ থাকতে হবে।
  • কমপক্ষে 75% হিমোগ্লোবিনের মাত্রা হতে হবে (পুরুষের ক্ষেত্রে ১২.৫ গ্রাম/ডি এল ও নারীদের ক্ষেত্রে ১১.৫ গ্রাম/ডিএল)।
  • ক্রনিক ডিজিজ যেমন হৃদরোগ, রক্তচাপ, ফুসফুসের রোগ ও যেকোনো ধরনের জটিল রোগ থেকে মুক্ত থাকা লাগবে।
  • যে সকল রক্তদাতা এনএসএইড বা অ্যাস্পিরিন সেবন করেছে, তাদের কমপক্ষে তিন দিন ওষুধ বন্ধ রাখার পর রক্তদান করতে হবে।
  • রক্তদাতা ম্যালেরিয়া, হেপাটাইটিস বি ও সি, সিফিলিস এবং এইচআইভি মুক্ত কিনা তা স্ক্রীনিং এর মাধ্যমে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।

রক্ত নেয়ার ক্ষেত্রে আমাদের কি করা উচিত

যে কোন সময় যে কারোরই রক্তের প্রয়োজন হতে পারে। আমরা যদি এই কথা মনে রেখে এখনই প্রস্তুতি নিয়ে রাখি, তবে রক্ত পরি সঞ্চালনের সমস্যা থেকে বাঁচার সম্ভব হবে। যে সকল উদ্যোগগুলো আমাদের নিতে হবে তা হচ্ছে-
  • রক্তবাহিত রোগে সংক্রমিত হলে রক্তদান করা থেকে বিরত থাকা।
  • সকলকে রক্তদানে উদ্বুদ্ধ করা এবং নিজের নিয়মিত রক্ত দান করা।
  • পেশাদার রক্তদাতার রক্ত কেনা থেকে বিরত থাকা।
  • শুধুমাত্র নিবন্ধনকৃত ব্লাড ব্যাংকে রক্তদান এবং রক্ত গ্রহণ করতে হবে।
  • নিকটস্থ ব্লাড ব্যাংকের ঠিকানা এবং ফোন নাম্বার জেনে রাখা উচিত।
  • নিজের, বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজনের রক্তের গ্রুপ জেনে রাখা।

শেষ কথাঃ রক্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কী কী জটিলতা হতে পারে

রক্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কী কী জটিলতা হতে পারে রক্ত নেয়ার ক্ষেত্রে আমাদের কি করা উচিত সে সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের পুরো পোস্টটি ভালোভাবে পড়ুন, আশা করি সবকিছু ভালোভাবে বুঝতে পারবেন। রক্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কী কী জটিলতা হতে পারে সে সম্পর্কে সবার আগে জানতে হলে আমাদের সাথেই থাকুন।

আজ আর নয়, রক্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কী কী জটিলতা হতে পারে সে সম্পর্কে আপনার কোন কিছু জানার থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আশা করি আমরা আপনার উত্তরটি দিয়ে দেবো। তাহলে আমাদের আজকের এই রক্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কী কী জটিলতা হতে পারে সে সম্পর্কে পোস্টটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে, তাহলে আপনার ফেসবুক ইন্সটাগ্রাম প্রোফাইলে আমাদের পোস্টটি শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ। ২৩৭৬৬

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url