কিভাবে বুঝবেন আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম
কিভাবে বুঝবেন আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম সেটা কি জানেন? ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শরীরকে বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। আজ আমরা আপনাদের কিভাবে বুঝবেন আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তার বিস্তারিত তথ্য জানাবো। কিভাবে বুঝবেন আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম জানতে নিচে পড়ুন।
দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার একজন ব্যক্তি ঘন ঘন অসুস্থ হয়ে পড়েন। দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার প্রাথমিক লক্ষণ হল খুব ঘন ঘন যে কোনো রোগে আক্রান্ত হয়। অনেক সময় রোগ গুলো এতো মারাত্মক অবস্থায় চলে যায় যে তার চিকিৎসা করাও কঠিন হয়ে পড়ে। তাই আমদের সবার উচিত শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপায় বা কিভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবেন তা জেনে সেই ভাবে চলা। এই কথা মাথায় রেখে আজ কিভাবে বুঝবেন আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খারাপ হলে বোঝার উপায় আপনাদের জানাবো।
সূচিপত্রঃ কিভাবে বুঝবেন আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম
- কিভাবে বুঝবেন আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম
- আপনি ঘন ঘন অসুস্থ হন এবং ভালো হতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় লাগে
- ঘন ঘন পেট ব্যথা এবং ডায়রিয়া হয়
- যদি আপনি সবসময় মানসিক চাপের মধ্যে থাকেন
- আপনার ক্ষত খুব ধীরে ধীরে নিরাময় হয়
- আপনার পেশী এবং জয়েন্টগুলোতে প্রায়ই ব্যথা হয়
- আপনার সবসময় ত্বকের সমস্যা থাকে
- কিভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবেন
- শেষ কথা
কিভাবে বুঝবেন আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম
আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকার এমন অনেক কারণ রয়েছে। কিছু আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন যেমন আপনার খাদ্য, স্ট্রেস লেভেল এবং আপনার ঘুমের মাধ্যমে। ইমিউন সিস্টেমের উন্নতির জন্য কোন ম্যাজিক পিল নেই।
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপায় বা কিভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবেন আপনি যদি অ্যালকোহল পান করেন তা কমানো, প্রচুর ব্যায়াম করা, পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম এবং ধূমপান এড়ানোর মতো কাজ গুলো করলে নিজে থেকেই আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থেকে বেড়ে যাবে। কিভাবে বুঝবেন আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তার কয়েকটি উপায় দেখুন।
আপনি ঘন ঘন অসুস্থ হন এবং ভালো হতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় লাগে
বছরে দু-তিন বার সর্দি কাশির মাধ্যমে হাঁচি হলে আতঙ্কিত হবেন না। বেশিরভাগ মানুষ প্রায় এক সপ্তাহের মধ্যে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। কিন্তু যদি আপনি ঘন ঘন সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হন যা কয়েক সপ্তাহ ধরে থাকে বা এমনকি প্রায়শই খাবারে বিষক্রিয়া হয় তবে এটি আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হওয়ার লক্ষণ হতে পারে।
যদি আপনি সর্দি, কাশি, নাক দিয়ে পানি পড়ে বা বছরে ২ বার এর বেশি ফ্লুতে আক্রান্ত হন, তাহলে আপনাকে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করার জন্য কাজ করতে হতে পারে। বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া সাধারণ সর্দি এবং কাশির কারণ হয়। রাইনোভাইরাসগুলি সবচেয়ে সাধারণ। যদি আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিক থাকে তাহলে যখন আপনি এই ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া দিয়ে আক্রান্ত সংক্রমিত হন।
তখন আপনার শরীর এই ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার সাথে লড়াই করতে পারে। আর যদি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হয় তাহলে শরীর শ্বেত রক্তকণিকা তৈরির চাহিদা পূরণ করতে পারে না। এর ফলে ঘন ঘন অসুখ হয় এবং শ্বাসকষ্ট ও দেখা দিতে পারে। এটা একটা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খারাপ হলে বোঝার উপায়।
ঘন ঘন পেট ব্যথা এবং ডায়রিয়া হয়
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হলে ঘন ঘন পেট খারাপ হওয়া এবং ডায়রিয়া হতে পারে। আপনার কি অনেকবার টাইফয়েড জ্বর হয়েছে? অথবা আপনি কি ডায়রিয়ার জন্য প্রতিনিয়ত ওষুধ খাচ্ছেন? যদি আপনার ঘন ঘন কোষ্ঠকাঠিন্যের সাথে এইগুলি থাকে তবে এটি একটি দুর্বল ইমিউন সিস্টেমের লক্ষণ হতে পারে। আপনি কি জানেন আপনার অন্ত্র আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে একটি বিশাল ভূমিকা পালন করে।
আরো পড়ুনঃ কিভাবে আপনার জিহ্বা পরিষ্কার করবেন
এই স্বাস্থ্যকর অণুজীবগুলি ইমিউন সিস্টেম বিশেষ করে শ্বেত রক্তকণিকায় প্রয়োজনীয় সংকেত প্রেরণ করে সংক্রমণের হাত থেকে অন্ত্রকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। কিন্তু যখন এই স্বাস্থ্যকর জীবাণুগুলি ধ্বংস হয়ে যায় তখন খারাপ জীবাণুগুলি বিস্তার লাভ করে। এর ফলে অন্ত্রে জ্বালা করে এবং পেটে ব্যথা এবং ডায়রিয়া হয়। কিভাবে বুঝবেন আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এটা তার একটি উপায়।
যদি আপনি সবসময় মানসিক চাপের মধ্যে থাকেন
আপনার জীবনে স্ট্রেসের পরিমাণ যত বেশি আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি। এর কারণ হল মানসিক চাপ হরমোন কর্টিসলের দীর্ঘস্থায়ী এবং দীর্ঘমেয়াদী শ্বেত রক্তকণিকা কমিয়ে দেয়। এই শ্বেত রক্তকণিকা আপনার শরীর রোগ থেকে রক্ষা করার প্রধান যোদ্ধা। তাই মানসিক চাপে আপনার জন্য খুব খারাপ খবর হতে পারে যা আপনার ইমিউন সিস্টেম দমনের কারণ হতে পারে। আর যার ফলে সংক্রমণ বেড়ে যায় এবং সুস্থ হতে অনেক সময় লাগে।
আরও জানা যায় যে ঘন ঘন মানসিক চাপের কারণে আর্থ্রাইটিস এবং আলসারেটিভ কোলাইটিসের মতো রোগগুলি বেড়ে যায়। একজিমা এবং হাঁপানির মতো অ্যালার্জির সমস্যা হতে পারে। এখান থেকে তো আমরা জানালাম কিভাবে বুঝবেন আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খারাপ হলে বোঝার উপায়।
তবে কিছু ধরণের মানসিক চাপ আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং সুস্থতার জন্য উপকারী হতে পারে। অর্থাৎ একটি অল্প সময়ের তীব্র ট্রেস যেমন একটি ট্র্যাফিক জ্যাম। এই সময় আপনার শরীরকে তাত্ক্ষণিকভাবে সুপারচার্জ করতে সাহায্য করে। এই কারণে অল্প সময়ের তীব্র মানসিক চাপ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপায়।
আপনার ক্ষত খুব ধীরে ধীরে নিরাময় হয়
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ত্বকের ক্ষত নিরাময়ে অনেক ভূমিকা পালন করে। ক্ষত নিরাময়ের চারটি পর্যায় রয়েছে এবং এই সমস্ত প্রক্রিয়াগুলি ত্বক মেরামতে সঠিকভাবে কাজ করার জন্য বিভিন্ন ইমিউন কোষ এবং গুরুত্বপূর্ণ কোষের উপর নির্ভর করে। যখন আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় তখন আপনার শরীরের কোনো জায়গায় ক্ষত হতে তা তাড়াতাড়ি ভালো হয় না। ক্ষত ভালো হতে অনেক সময় বা অনেক দিন লেগে যায়। এটাও আর একটা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খারাপ হলে বোঝার উপায়।
আপনার পেশী এবং জয়েন্টগুলোতে প্রায়ই ব্যথা হয়
অনেক দিনের জয়েন্ট এবং পেশী ব্যাথাগুলি অনেকটাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সাথে যুক্ত। যখন আমাদের ইমিউন সিস্টেম সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে তখন এটি প্রচুর ব্যথাজনক রাসায়নিক এবং শ্বেত রক্তকণিকা তৈরি করে। কিন্তু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হয়ে যাওয়ায় ব্যথা চলতে থাকে আর এই মনোসাইটগুলি কমে যায়।
আরো পড়ুনঃ কিভাবে বুঝবেন আপনার জলাতঙ্ক রোগ হয়েছে
এই মনোসাইটগুলি ইমিউন সিস্টেমকে নিয়ন্ত্রণ করে। সময়ের সাথে সাথে শরীরের জয়েন্টগুলি দীর্ঘস্থায়ীভাবে ফুলে যায় এবং প্রচুর ব্যথা হয়। কিভাবে বুঝবেন আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খারাপ হলে বোঝার উপায় হল পেশী এবং জয়েন্টগুলোতে প্রায়ই ব্যথা হওয়া।
অটোইমিউন রোগে একই ধরনের ঘটনা ঘটে যেখানে ইমিউন সিস্টেম শরীরের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং সময়ের সাথে সাথে এটি দুর্বল হয়ে যায় যা শরীরে ব্যথার সৃষ্টি করে। তাই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপায় হল যত্নের সাথে জয়েন্ট, পেশী এবং স্নায়ুর চিকিৎসা করা।
আপনার সবসময় ত্বকের সমস্যা থাকে
আপনার ত্বক আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সাথে খুব ঘনিষ্ঠ ভাবে জড়িত। আমাদের ত্বকের টিস্যুতে লিপিড নামক চর্বিযুক্ত একটি যৌগ থাকে। এই লিপিড একটি বাধা তৈরি করতে সাহায্য করে যা আপনার ত্বক থেকে পানি বাহির করতে বাধা দেয় এবং বাহিরে থেকে বিরক্তিকর এবং অবাঞ্ছিত জীবগুলি এতে প্রবেশ করা থেকে প্রতিরোধ করে।
আরো পড়ুনঃ বিনা অপারেশনে ফিস্টুলা চিকিৎসা কিভাবে করবেন
যাইহোক যখন আপনার ইমিউন সিস্টেমকে কোনো রোগের বিরুদ্ধে খুব বেশি কাজ করতে হয় তখন লিপিডগুলি দক্ষতার সাথে কাজ করতে পারেনা। আর এই সময় ত্বকে ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক প্রবেশ করে ব্রণ এবং একজিমা সৃষ্টি হয়। এইভাবে আপনি যদি আপনার ত্বকে চুলকানি, শুষ্ক বা সহজেই ফোঁড়া দেখতে পান তাহলে আপনি আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য চেষ্টা করুন। আর কিভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবেন বা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপায় তো আমরা আপনাদের সাথে শেয়ার করবো।
কিভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবেন
কিভাবে বুঝবেন আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খারাপ হলে বোঝার উপায় আমরা উপরে জেনেছি। এখন ভাল খবর হল যে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপায় আছে। কিন্তু কিভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবেন তা নিচে জানাবো। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম বা দুর্বল তারা সুস্থ থাকার এবং সংক্রমণ এড়ানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে পারেন।
- আপনার ইমিউন সিস্টেমকে বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য পুষ্টিকর খাবার খান। এটা সব থেকে ভালো উপায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর।
- সূর্য এর আলোতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ডি রয়েছে। এছাড়াও প্রতিদিন অন্তত ১ ঘন্টা বা তার কিছু কম সময় সূর্য এর আলোতে থাকলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
- ঘুম মানব শরীরের জন্য খুব দরকার। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তারা যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমায় তাহলে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।
- ধূমপান করলে তা বন্ধ করুন
- অ্যালকোহল পান করা কমান
- মানসিক চাপ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখুন
- যারা অসুস্থ মানে যারা ছোঁয়াচে রোগে আক্রান্ত তাদের এড়িয়ে চলুন
- ঘরের জিনিসপত্র জীবাণুমুক্ত রাখার জন্য সবসময় পরিষ্কার পরিছন্ন থাকুন
- নিয়মিত ব্যায়াম করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে
কিভাবে বুঝবেন আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম - শেষ কথা
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হল রক্ত কণিকা এবং শরীরকে ক্ষতিকারক জীবাণু থেকে রক্ষা করার একটি ক্ষমতা। যদি একজন ব্যক্তি ঘন ঘন বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণে বা রোগে আক্রান্ত হয় তাহলে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আমাদের শরীর কে সুস্থ রাখতে খুব দরকারি একটা উপাদান। যদি কোনো কারণে এটা কমে যায় তাহলে আমরা অনেক জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারি।
কিন্তু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হলেও একজন ব্যক্তি নিজেকে সুস্থ রাখতে এবং তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বাড়িতে কিছু পদক্ষেপ নিতে পারেন। উপরে আমরা কিভাবে বুঝবেন আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম ও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপায় আলোচনা করেছি। [জব আইডি=২২৪৯৮]