ঋণ পরিশোধ না করার শাস্তি - ব্যাংক ঋণ পরিশোধ না করার শাস্তি

 ব্যাংক ঋণ পরিশোধ না করার শাস্তি এ সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক থাকেন তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। অনেকেই ঋণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ইচ্ছুক থাকেন। চলুন তাহলে ঋণ পরিশোধ না করার শাস্তি - ব্যাংক ঋণ পরিশোধ না করার শাস্তি সম্পর্কে জানা যাক।আটিকের কি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভালোভাবে পড়লে ব্যাংক ঋণ পরিশোধ না করার শাস্তি সম্পর্কে জানতে পারবেন।

জীবন যাপনের জন্য অনেকে অনেক সময় ঋণ গ্রহণ করে থাকেন। তাই আমাদের প্রত্যেকেরই কর্তব্য হলো ঋণ পরিশোধ না করার শাস্তি - ব্যাংক ঋণ পরিশোধ না করার শাস্তি এ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে থাকা, তাহলে ঋণ দিতে তার সুবিধা হবে। চলুন তাহলে আর দেরি না করে ঋণ পরিশোধ না করার শাস্তি - ব্যাংক ঋণ পরিশোধ না করার শাস্তি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।

পেস সূচিপত্রঃ ঋণ পরিশোধ না করার শাস্তি - ব্যাংক ঋণ পরিশোধ না করার শাস্তি

ভূমিকা

ঋণ বিতরণ ও ব্যবহারে অনিয়ম হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও গ্রাহকদের কঠোর শাস্তি মুখোমুখি হতে হয়। এ কারণে এখন থেকে ঋণের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে ঋণ পরিশোধ না করার শাস্তি - ব্যাংক ঋণ পরিশোধ না করার শাস্তি সম্পর্কে জানা জরুরী। নিয়মিত কীর্তি আদায় করতে হবে। কোন ঋণে বড় ধরনের অনিয়ম পেলে তা সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জানাতে হবে। অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ নিয়ে বড় ধরনের জালিয়াতি ঘটনা সম্পত্তি প্রকাশিত হওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক হাতে তদারকি জোরদার করেছে।

পৃথিবীতে যত ধরনের বোঝা হতে পারে তার মধ্যে ঋণের বোঝা সবচেয়ে ভারী। অতিমাত্রায় ঋণগ্রস্ত হওয়ার কারণে মানসিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। কখনো কখনো এই অস্থিরতা হতাশায় রূপ নেয় আর ঋণ পরিশোধের অপারগনতাই সৃষ্ট এই তীব্র হতাশা অনেকক্ষেত্রে মানুষকে আত্মহত্যার মতো জঘন্য কাজের দিকে ঠেলে দেয়। চলুন তাহলে ব্যাংক ঋণ পরিশোধ না করার শাস্তি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা যাক বা জেনে নেওয়া যাক।

ঋণ পরিশোধ না করার শাস্তি

জীবন জীবিকার অনিবার্য বাস্তবতায় কখনো কখনো ঋণ করতে হয়। তাই আমাদের সকলকেই ঋণ পরিশোধ না করার শাস্তি - ব্যাংক ঋণ পরিশোধ না করার শাস্তি সম্পর্কে জানতে হবে। অন্যের কাছ থেকে ধার করে প্রয়োজন পূরণ করতে হয়। কিন্তু সময় মতো ওয়াদা মত এই ঋণ পরিশোধ করা জরুরি। ঋণ পরিশোধের অপরাধ। ঋণ পরিশোধ না করা বান্দার অধিকার নষ্ট করার নামান্তর। আল্লাহর হক নষ্ট করলে তওবার মাধ্যমে ক্ষমা হয়। কিন্তু বান্দার হক নষ্ট করলে সংশ্লিষ্ট বান্দার কাছ থেকে ক্ষমা না পেলে ক্ষমা লাভের উপায় নেই। সামর্থ থাকা সত্ত্বেও দুনিয়াতে এই ঋণ আদায় না করলে পরকালে আমলের মাধ্যমে তা বুঝিয়ে দিতে হবে। ঋণ পরিশোধ করা হুক্কুল এবাদত এর ভেতরে পড়ে।
ঋণ পরিশোধ না করার শাস্তি হলো-
  1. পাওনাদারকে নিজের নেক আমল প্রদান- ঋণ পরিশোধ না করে কেউ মারা গেলে পাওনাদার যদি ঋণ গ্রহীতাকে মাফ না করে বাড়ির মওকুফ না করে অথবা রিনির ওয়ারিশরা সেই দিন পরিশোধ না করে তাহলে কেয়ামতের দিন নেক আমল দানের মাধ্যমে ঋণ পরিশোধ করতে হবে। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন কেউ ঋণগ্রস্থ অবস্থায় মারা গেলে তার ঋণ পরিশোধ করার জন্য কেয়ামতের দিন কোনদিন আর বা টাকা থাকবে না বরং ঋণ পরিশোধের জন্য শুধুমাত্র নেক আমল অবশিষ্ট থাকবে।
  2. শহীদ হলেও ঋণের গুনাহ মাফ হয় না- হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, শহীদ ব্যক্তির সব গুনাহ ক্ষমা করা হবে কিন্তু ঋণ ছাড়া। অর্থাৎ আল্লাহর পথে শহীদ ব্যক্তি ও ঋণের পাপ থেকে পরকালে পার পাবে না তার সব পাপ ক্ষমা করা হলো ঋণের পাপ ক্ষমা করা হবে না।
  3. ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির জান্নাতে প্রবেশে বাধা- সামুরা বিন জুনবোদ রাজিয়াতুল আনহু বলেন একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের উদ্দেশ্যে খুতবারত অবস্থায় জিজ্ঞেস করেন অনু গোত্রের কোন লোক এখানে আছে কি? কিন্তু কেউ সাড়া দিল না। এমনকি তৃতীয়বার একই প্রশ্ন করার পর এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল হে আল্লাহর রাসূল আমি উপস্থিত আছি। তখন তিনি বললেন, প্রথম দুইবার তুমি ছাড়া দিলে না কেন? জেনে রেখো! আমি তোমাদের শুধু কল্যাণ কামনা করি। তোমাদের অমুক ব্যক্তি ঋণের দায় আটকে আছে, সামুরা রাজিয়াতালা আনহু বললেন, তখন আমি এই ব্যক্তিকে মৃত ব্যক্তির পক্ষে ঋণ পরিশোধ করতে দেখি। তারপর আর কেউ তার কাছে আর কোন পাওনা চাইতে আসেনি।
  4. রাসুল (রা.) জিনগ্রস্ত ব্যক্তির জানাজা পড়তেন না- আবু হুরাইয়া রাজিয়াতুল আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন ঋণ ব্যক্তির জানাজা উপস্থিত করা হতো তিনি জিজ্ঞেস করতেন সে তার ঋণ পরিশোধের জন্য অতিরিক্ত সম্পদ রেখে গেছে কি? যদি বলা হতো সে তার ঋণ পরিশোধের মতো সম্পদ রেখে গেছে। তখন তার জানাজার সালাত আদায় করতেন। নতুবা বলতেন তোমাদের সাথির জানাজা আদায় করে নাও।
  5. প্রভাবশালী ব্যক্তির ঋণ খেলাপির দায়- আমাদের সমাজের এক শ্রেণীর প্রভাবশালী ব্যক্তি ব্যাংক থেকে মোটা অংকের ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করে না। ফলে এই অপকর্মের খেসারত গুনতে হয় গোটা জাতিকে। এভাবে ঋণ খেলাপিয়া হুক্কুল ইবাদত বা বান্দার অধিকার নষ্ট করে চলেছেন। যথাযথ আইনের অনুশাসন এবং দ্বীন বিমুখী তাই এই লাগামহীন ঋণ খেলাপির মূল কারণ।

ব্যাংক ঋণ পরিশোধ না করার শাস্তি

ব্যাংক ঋণ পরিশোধ না করার শাস্তি এ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানা থাকলে আমাদের ঋণ পরিশোধ করতে অনেক সুবিধা হবে। অনেকেই ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করে থাকে। আর সঠিক সময়ে এই দিন পরিশোধ না করতে পারলে ব্যাংক থেকে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয় যা অনেক শাস্তিদায়ক। চলুন তাহলে ব্যাংক ঋণ পরিশোধ না করার শাস্তি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

আইনগত ঋণ শোধ করতে গ্রহিতাকে ব্যাংকে যথেষ্ট সময় দিয়ে থাকে। ঋণগ্রহীতার অ্যাকাউন্ট কে যদি নন পারফরম্যান্স অ্যাসেট হিসেবে ধরা হয়, যেখানে ৯০ দিন ধরে টাকা সোদ দেওয়া হয়নি এমন পরিস্থিতিতে রোহিতাকে ঋনদানের কাছে ৬০ দিনের নোটিশ পাঠানো বাধ্যতামূলক। এই সময়ের মধ্যে যদি ওই ব্যক্তি দিনে টাকা শোধ করতে না পারে সেক্ষেত্রে তার সম্পত্তি বা জেয়াপ্ত করে ব্যাংক বিক্রি করতে পারে। তবে বিক্রি করার আগে ঋন শোধে ব্যর্থ ব্যক্তি কে আবার ৩০ দিন সময় দিতে হবে। নোটিশের সম্পত্তির খুঁটিনাটির বিবরণ দেওয়া বাধ্যতামূল। ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার পরে যদি যথা সময়ে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করতে পারা যায় তাহলে আপনার সয় সম্পত্তির ওপরে ব্যাংকের অধিকার জমাতে সময় লাগবে না।

ঋণ পরিশোধ না করার আইন

ইতিমধ্যে আমরা জেনেছি ঋণ পরিশোধ না করার শাস্তি - ব্যাংক ঋণ পরিশোধ না করার শাস্তি সম্পর্কে,  চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক ঋণ পরিশোধ না করার আইন সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে। ঋণ নিয়ে শোধ করতে পারেননি তা বলে এই বিষয়ে সমস্ত অধিকার হারিয়েছেন এমন ধারণা ভুল। জেনে নিন এই পরিস্থিতিতে কি কি পদক্ষেপ করতে পারেন।
ঋণ পরিশোধ না করার আইন হলো-
  1. যথেষ্ট সময় পাওয়ার অধিকার- আইন, ঋণশোধ করতে গ্রহীতাকে ব্যাংকের যথেষ্ট সময় দিতে হবে। ঋণগ্রহীতার অ্যাকাউন্ট কে যদি নন পারফরম্যান্স অ্যাসেট হিসেবে ধরা হয়, যেখানে ৯০ দিন ধরে টাকা শোধ দেওয়া হয়নি এমন পরিস্থিতিতে রোহিতাকে ঋনদানের কাছে ৬০ দিনের নোটিশ পাঠানো বাধ্যতামূলক। এই সময়ের মধ্যে যদি ওই ব্যক্তি দিনে টাকা শোধ করতে না পারে সেক্ষেত্রে তার সম্পত্তি বা জেয়াপ্ত করে ব্যাংক বিক্রি করতে পারে। তবে বিক্রি করার আগে ঋন শোধে ব্যর্থ ব্যক্তি কে আবার ৩০ দিন সময় দিতে হবে। নোটিশের সম্পত্তির খুঁটিনাটির বিবরণ দেওয়া বাধ্যতামূল।
  2. সঠিক দাম পাওয়ার অধিকার- ধার শোধ করতে না পারলে নিয়ম অনুযায়ী আপনার সম্পত্তি নিলাম করে টাকা আদায় করতে পারে সেই সংস্থা। তবে এই পদক্ষেপ নেওয়া যায় আপনাকে দেওয়া ৬০ দিনে নোটিশের মেয়াদ ফুরালে এবং সে সময়ের মধ্যে ঋণ পরিশোধ না হলে। দিলাম ঢাকার আগে ব্যাংকে তার নিজের ভ্যালুয়ার দিয়ে সম্পত্তির বিস্তারিত মূল্যায়ন করাতে। শিমুলের উল্লেখ কর করে ঋণ গ্রহিতাকে আরেকটি নোটিশ জারি করতে হবে। নোটিশের সম্পত্তি রিজার্ভ এবং নিলামের দিন কোন জানাতে হবে। যদি নিলামে ওঠা দামের চেয়ে বেশি দামের সম্পত্তি কিনতে কেউ রাজি থাকেন তাহলে সেই সম্ভাব্য ক্রেতার বিস্তারিত বিবরণ ব্যাংককে জানাতে পারেন ঋণগ্রহীতা।
  3. অতিরিক্ত অর্থ পাওয়ার অধিকার- ঋণশোধের উদ্দেশ্যে ব্যাংক আপনার সম্পত্তি অধিগ্রহণ করলে ভেঙ্গে পড়বেন না। নিলামে উঠলেও সে সম্পত্তির বিষয়ে খবর রাখুন মনে রাখবেন আপনার ধার নেওয়া অর্থশোধ হওয়া পর্যন্ত উদ্বৃত্ত উৎসব টাকা আপনারই প্রাপ্য।
  4. আপত্তি জানানোর অধিকার- নোটিশে উল্লেখিত মেয়াদের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কৃতপক্ষকে সম্পত্তি অধিগ্রহণ সম্পর্কে আপত্তি জানাতে পারেন। আপনার চিঠির উত্তর ৭ দিনের মধ্যে কর্তৃপক্ষ গণ দিতে বাধ্য।
  5. মানবিক ব্যবহার পাওয়ার অধিকার- ঋণের অর্থ আদায়ের সময় গ্রহীতার সঙ্গে অত্যন্ত রুড ব্যবহার করা হয় বলে লাগাতার নারীদের করা অবস্থায় নিয়েছেন রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। গ্রাহকদের প্রতি আচরণ বিধি মেনে এই ব্যাপারে সতর্ক হয়েছে ব্যাংক কৃতিপক্ষও। নিয়ম অনুসারে গ্রহীতা নির্দিষ্ট স্থান ও সময় মেনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারবেন ঋণ আদায় নিয়োজিত এজেন্ট। এই ব্যাপারে ঋণগ্রহীতার গোপনীয়তা রক্ষা করা তার কর্তব্য।

ঋণ পরিশোধ করার দোয়া

ইসলাম আমাদের জীবনের সকল সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছে এবং এর উপযুক্ত সমাধানও দিয়েছে। আমাদের উচিত জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামের নির্দেশিত পথ অনুসরণ করা। ঋণ সময়মতো পরিশোধ করা না গেলে ঋণের বোঝা আরও ভারী হতে থাকে। ইসলামে সাধ্যের বাহিরে ঋণ দেওয়া এবং নেওয়া দুটি নিষিদ্ধ। তবে ঋণগ্রস্তের ঋণ মাফ করে দিলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির জন্য আখিরাতে অনেক বড় পুরস্কার রয়েছে বলে হাদিসে এসেছে। বিভিন্ন দোয়া বর্ণিত রয়েছে এ দোয়াগুলো অত্যন্ত কার্যকর। সময় মত ঋণ পরিশোধের পাশাপাশি দোয়া গুলো ভালো করে মুখস্ত করে নিয়ে নিয়মিত আমল করতে পারলে আল্লাহ চান মুক্ত হওয়া সম্ভব। ঋণ পরিশোধ না করার শাস্তি সম্পর্কিত আমরা জানলামই চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক ঋণ পরিশোধ করার জন্য আমাদের ইসলাম ধর্মে কি দোয়া রয়েছে।

ঋণ মুক্ত দোয়া হলো- আল্লাহুম্মা ফারিজাল হাম্নি। কা-শিফাল গম্নি। মুজিবা দাওয়াতিল মুদতাররীন। রাহমা-নাদ্দুনইয়া ওয়াল আখিরাতি ওয়া রহিমাহুমা। আনতা রহমানী ফারহামনি রহমাতান তুগনীনী বিহা আন রহমাতি শীওয়াক।

অর্থ- হে আল্লাহ, আপনি পেরেশানি দূর করার মালিক দুশ্চিন্তা লাঘবকারী, দুর্দশা গ্রস্থ দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া সকল নিরূপায় মানুষের দোয়া ও আহবানে সাড়া দানকারী। দুনিয়া এবং আখিরাতে আপনি রহমান উভয় জগতে আপনি রাহিম আপনি আমাকে দয়া করে দিন। আমাকে এমন অনুগ্রহ দ্বারা দয়া করুন যা আপনার রহমত ছাড়া অন্য সবার অনুগ্রহ থেকে আমাকে সম্পূর্ণ ও মুখাপেক্ষী করে দিবে। (তারবাণী, কিতাবুর দোয়া- ১০৪১)।

ঋণ পরিশোধ করার উপায়

মানুষের জীবনের চাহিদার শেষ নেই। মানুষ মাসিক আয় থেকে ব্যক্তিগত জীবনের প্রয়োজন মেটানোর পর চাহিদা অনুযায়ী সক্র পূরণ করতে অনেকটাই হিমশিম খেতে হয়। তখনই ব্যাংকের দ্বারস্থ হতে হয় ঋণ সুবিধার জন্য। কিন্তু অনেক সময় সেই দিন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়ায় কারণ প্রতি মাসে তখন ঋণ পরিশোধের টাকাটা বাড়তি ঝামেলা হয়ে দাঁড়ায়। এই ঝামেলা এড়ানোর কিছু সহজ উপায় রয়েছে চলুন সে সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা যাক।
ঋণ পরিশোধ করার উপায় হল-
  1. বাজেট তৈরি করুন- প্রথমে পুরো মাসের একটি বাজেট তৈরি করুন হিসাব করে নিন এই মাসে আপনি কোথায় কি খরচ করবেন। এরপর সেখান থেকে টাকা জমানোর চেষ্টা করুন। প্রতিমাসের চেষ্টা করুন কিছু বাড়তি টাকা জমানোর। যাতে ঋণ পরিশোধ করতে সুবিধা হয়।
  2. ঋণের টাকাকে অগ্রাধিকার দিন- মাসের প্রথমে বেতন পাওয়ার পর বাসা ভাড়া শোধ করুন। এরপর বিল সংক্রান্ত বিষয়গুলো পরিশোধ করে ফেলুন। এরপর পরপর ঋণের টাকা পরিশোধ করার চেষ্টা করুন। যে জিনিসগুলো গুরুত্বপূর্ণ নয় সেগুলোর ঋণ পরিষদের কয়েকটা মাস এড়িয়ে চলুন।
  3. টাকা পরিশোধ করার ছক তৈরি করুন- চেষ্টা করুন দ্রুত ঋণ শোধ করার আর সম্ভব না হলে ঋণদাতাদের সঙ্গে মধ্যস্ততা করার চেষ্টা করুন। টাকা শোধ করতে সময় লাগছে এবং আপনি টাকা ওদের জন্য চেষ্টা করছেন কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে সম্ভব হয়ে উঠছে না তখন বিষয়টি তাদের বুঝিয়ে বলুন। হয়তো সেই ব্যাংকের কোন নিয়ম রয়েছে অল্প অল্প করে টাকা পরিশোধ করার। সেই নিয়ম মেনে চলার চেষ্টা করুন। আর যদি আপনি এমনটি না করে ব্যাংকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন তাহলে ব্যাংক আপনাকে কোট পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে।
  4. ঋণদাতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করুন- কখনো ঋণদাতাদের এড়িয়ে চলবেন না এতে বিপদ বাড়তে পারে তাদের সাথে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করুন এটা কখনোই ভাবা উচিত না যে আপনি তাদের ফোন ধরছেন না বা নোটিশগুলো এড়িয়ে চলছেন এর কোন পাল্টা ব্যবস্থা কথা তারা ভাবছে না। তাদের জানান আপনার পরিস্থিতির কথা তারা কিছুটা হলেও চেষ্টা করবে আপনার যেভাবে সুবিধা হয় সেভাবে দিন পরিশোধের।
  5. আয় বাড়ানোর চেষ্টা করুন- যদি কোন ভাবে আপনার আয় দিয়ে ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব না হয় তাহলে চেষ্টা করুন অন্য একটি খন্ডকালীন চাকরি নেওয়ার। তাহলে দ্রুত ঋণশোধ হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে আর যে জিনিসগুলো প্রয়োজনীয় না সেসব জিনিস বিক্রি করে ঋণের কিছুটা শোধ করতে পারেন।
  6. এই ঘটনার পূর্ণবৃত্তির হওয়া থেকে বিরত থাকুন- একটা ঋণ পরিশোধের পর অন্য আরেকটি ঋণের জড়াবেন না যতক্ষণ না অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। ব্যাংকের বিষয়গুলো সময় মতো পরিশোধ করার চেষ্টা করুন বেশি দেরি করলে একসঙ্গে অনেকটা চাপ হয়ে যায়।

ঋণ পরিশোধের গুরুত্ব

বর্তমান সমাজে ব্যবসা-বাণিজ্য ও জীবন পরিচালনা করতে গেলে একটি অনস্বীকার্য বাস্তবতা হচ্ছে ঋণ আদান প্রদান। পবিত্র কুরআন হাদীসে এসেছে দিন প্রদানকে উৎসাহিত করা হয়েছে অপরদিকে দিন পরিষদের ব্যাপারে যথেষ্ট গুরুত্বারোপ হয়েছে। ঋণগ্রহীতা ঋণের টাকা নিয়ে যেমন উপকৃত হয় এবং তা প্রয়োজন পূরণ করতে পারে তেমনি ঋণদাতা এর মধ্য দিয়ে বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির সাহায্যে এগিয়ে আসে এবং সওয়াবের অধিকারী হয়। যারা সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও ঋণ পরিশোধের টালবাহানা করবে তাদের জন্য উচ্চারিত রয়েছে কঠোর হুঁশিয়ারি। ঋণ পরিশোধ করার গুরুত্ব সম্পর্কে আমাদের সকলের জানা দরকার নয়তো ঋণ পরিশোধ না করার শাস্তি - ব্যাংক ঋণ পরিশোধ না করার শাস্তি সম্পর্কে আমরা ইতিমধ্যে অবগত হয়েছি। চলুন এবার জেনে নেই দিন পরিশোধের গুরুত্ব কেন এত।

ঋণ পরিশোধ এর গুরুত্ব হল-
  1. ঋণ পরিষদের ব্যাপারে অত্যধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে সূরা নিসার ১১ থেকে ১৪ নাম্বার আয়াতে। আল্লাহ এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন এমনকি তিনি নির্দেশ দিয়েছেন যেন মৃত ব্যক্তির ওসিয়ত ও ঋণ পরিশোধের পর তার পরিতত্ত্ব সম্পত্তি বন্টন হয়।
  2. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাথীদের নামাজে জানাজা পড়াতেন না যদি না তার ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা থাকত।
  3. হযরত শাওবান রাজিয়াতুল আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে লোক তিনটি বিষয়ে অর্থাৎ অহংকার, গনিমতের সম্পদ আত্মরাস ও ঋণ থেকে মুক্ত অবস্থায় মারা গেল সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
  4. হযরত আবু হুরাইয়া রাজিয়াতুল আনহু থেকে বর্ণিত মহানবী বলেছেন, তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম লোক যে উত্তমরূপে ঋণ পরিশোধ করে।
  5. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর ইবনে আস রাজিয়াতুল আনহু থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ঋণ ব্যতীত শহীদের সব গুনাহ হোক ক্ষমা করে দেয়া হবে।
  6. হযরত আবু হুরাইয়া রাজিয়াতুল আনহু থেকে বর্ণিত রাসুল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন মুমিন ব্যক্তির রুহ তার ঋণের কারণে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে যতক্ষণ না তার পক্ষ থেকে তা পরিশোধ করা হয়।
  7. হযরত আবু কাতাদহ রাজিয়াতুল আনহু বলেন এক ব্যক্তির জিজ্ঞেস করল ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনি কি মনে করেন যদি আমি আল্লাহর পথে অগ্রগামী অবস্থায় পশ্চাত্পদ না হয়ে সোয়াবের আশায় দৃঢ় পথ থেকে শহীদ হই তাহলে আল্লাহ আমার সব পাপ ক্ষমা করে দেবেন কি? তখন উত্তরের রাসুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন হ্যাঁ যদি তুমি ধৈর্য ধারণকারী সোয়াবের আশায় আশা নিবি তো হয়ে পৃষ্ঠ প্রদর্শন না করে শত্রুর মুখোমুখি অবস্থায় নিহত হও অবশ্যই তোমার সকল গুনাহ মাফ হবে তবে ঋণের কথা আলাদা। কেননা জিব্রাইল আলাইহি সালাম আমাকে এ কথা বলেছেন।
  8. ইবনে মাসুদ রাজিয়াতুল আনহু থেকে বর্ণিত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে ব্যক্তি সম্পদ আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে কসম করবে সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে এমন অবস্থায় যে আল্লাহ তার প্রতি রাগান্বিত থাকবে।
  9. সময় মতো প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে ঋণ পরিশোধ করে দেয়া মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। ঋণগ্রহীতা যেন এ দায়িত্ব যথাযথ পালন করতে পারে।

মৃত ব্যক্তির ঋণ পরিশোধ

কোন ব্যক্তি যদি ঋণ রেখে মারা যায় তাহলে মৃতের সব সম্পদ বিক্রি করে হলেও পরিবারকে ঋণ পরিশোধ করতে হবে। কারণ ঋণ পরিশোধ ছাড়া মৃত্যুবরণ করলে হাশরের মাঠে নেকি থেকে ঋণের দাবি পূরণ করতে হবে। মহান আল্লাহ উত্তরাধিকার বিষয়ে আলোচনাশেষে বলেন করার পর এবং তার ঋণ পরিষদের পর মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বন্টন হবে। নিজ সম্পত্তি থেকে পিতা-মাতার ঋণ পরিশোধ করা সন্তানের জন্য বাধ্যতামূলক। ঋণ পরিশোধ করা পিতা-মাতার খিদমতের অংশ ও অশেষ শোয়াবের কাজ হওয়ায় সন্তান নিজ দায়িত্বে তা পরিশোধ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন মুমিনদের আত্মা ঝুলন্ত অবস্থায় রাখা হয় তার ঋণের কারণে যতক্ষণ না তার পক্ষ থেকে দিন পরিশোধ করা হয়।

আর যদি ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির কিছুই না থাকে এবং তার স্ত্রী সন্তানরাও যদি সক্ষম না হয় সমাজ সংগঠন বা সরকার সে দায়িত্ব বহন করবে। এক্ষেত্রে সুদ না দিয়ে শুধু মূল অংশ দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। অতএব প্রত্যেকের উচিত যথাসম্ভব ঋণ গ্রহণ থেকে বেঁচে থাকা যা পরিশোধ করতে না পারলে ইহকালে পরিবারের জন্য ও পরকালে নিজের জন্য কঠিন বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। মৃত ব্যক্তির ঋণ পরিশোধ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ তার পরিবারের কাছে নয়তো তাকে ইহকালে অনেক বড় মাশুল দিতে হবে আর মৃত ব্যক্তির যারা জীবিত আছে ঋণ পরিশোধ না করার শাস্তি তাদের এ সম্পর্কে জানা থাকা দরকার কারণ ঋণ পরিশোধ না করলে তাদের শাস্তি ভোগ করতে হবে।

আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা খুব সহজেই বুঝতে পেরেছেন ঋণ পরিশোধ না করার শাস্তি - ব্যাংক ঋণ পরিশোধ না করার শাস্তি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে। আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আপনি আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করতে পারেন এবং তাদেরও পড়ার সুযোগ করে দিতে পারেন। এরকম সুন্দর সুন্দর টিপস পেতে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারেন। আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। ২৪১৪১

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url