কিভাবে বুঝবেন আপনি ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত
কিভাবে বুঝবেন আপনি ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত কিনা? ফুসফুস ক্যান্সার যেন সকলের
কাছে এক আতঙ্কের নাম। তাই কিভাবে বুঝবেন আপনি ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন
কিনা এ বিষয়টি জানা অতিব জরুরি। আজ এই পোস্টটি থেকে আপনারা কিভাবে বুঝবেন আপনি
ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন কিনা তার বিস্তারিত কৌশল সমূহ।
মানুষের বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার হতে পারে। তারমধ্যে ফুসফুসে সংক্রমণজনিত কারণে
যে ক্যান্সার হয় তাকে ফুসফুস ক্যান্সার বলে। সকল ক্যান্সারের মধ্যে বর্তমানে
ফুসফুস ক্যানসারকে বেশ মারাত্মক হিসেবে চিহ্নিত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণগুলো কি কি, কিভাবে বুঝবেন আপনি ফুসফুস
ক্যান্সারে আক্রান্ত এসব যাবতীয় বিষয় জানতে এই সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ুন।
পোস্ট সূচিপত্র - কিভাবে বুঝবেন আপনি ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত তার কৌশলসমূহ জানুন
ভূমিকাঃ ফুসফুস ক্যান্সার কেন হয়
ফুসফুস ক্যান্সার একটি মারাত্মক রোগ, যা প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত করা বেশ কঠিন।
কারণ অন্যান্য সব ক্যান্সার সনাক্তকরণের যে স্ক্রিনিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় তা
ফুসফুস ক্যান্সারের ক্ষেত্রে অতটা কার্যকরী হয় না। কিভাবে বুঝবেন আপনি ফুসফুস
ক্যান্সারে আক্রান্ত তা জানার পূর্বে জেনে নিন ফুসফুস ক্যান্সার কেন হয়।
ফুসফুস ক্যান্সারের প্রধান কারণ হচ্ছে অতিরিক্ত তামাক গ্রহণ করা। দৈনিক যারা
প্রচুর পরিমাণে সিগারেট সেবন করে থাকেন তাদের একটি দীর্ঘ সময় অর্থাৎ ৩০/৪০ বছর পর
ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ব্যাপক সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া বায়ু দূষণ,
জেনেটিক কারণ, রেডিয়েশন থেরাপি, পেশাগত কারণ ও পরিবেশগত নানা কারণে ফুসফুস
ক্যান্সার হতে পারে।
ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণগুলো কি কি
ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে প্রাথমিক অবস্থায় তা বুঝতে পারা যায় না। তবে
শরীর ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে একটি নির্দিষ্ট সময় পর বিভিন্ন লক্ষণ দেখে
ধারণা পাওয়া যায় যে, শরীরে ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে। কিভাবে বুঝবেন আপনি
ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন কিনা তার কিছু লক্ষণ জেনে নিন।
- প্রচন্ড খুশখুশে কাশি দেখা দেয়।
- দীর্ঘদিন ঔষধ সেবনেও কাশি ভালো না হলে।
- শ্বাসকষ্ট, গভীর শ্বাস এবং বুকে ব্যথা হলে।
- শরীরের দুর্বলতা ও ক্লান্তি ভাব দেখা দিলে।
- হঠাৎ করে অতিরিক্ত ওজন হ্রাস পাওয়া।
- খাবারের রুচি না থাকা ক্ষুধা মন্দা সৃষ্টি হওয়া।
- সহজেই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়া।
- শরীরের অস্বাভাবিক কোষ বৃদ্ধি পেলে।
- রক্তবমি অথবা কাশির সাথে রক্ত পড়লে।
- একটুতেই রোগ শোকে আক্রান্ত হলে অথবা ঘনঘন নিউমোনিয়া হলে।
কিভাবে বুঝবেন আপনি ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন
ফুসফুস ক্যান্সার বেশ মারাত্মক একটি রোগ। যারা অধিক পরিমাণে ধূমপান করেন তাদের
একটি বড় অংশ ভবিষ্যতে ফুসফুস ক্যান্সার দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।
ক্যানসারকে পুরোপুরি নির্মূল করতে পারে এখন পর্যন্ত এমন কোন চিকিৎসা আবিষ্কৃত
হয়নি। তবে কিভাবে বুঝবেন আপনি ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন কিনা তার
কৌশলসমূহ এখন জেনে নিন।
- ব্রংকাইটিস হলে: সাধারণভাবে ব্রঙ্কাইটিস হলে প্রচন্ড কাশি ও বুকে ব্যথা হতে দেখা যায়। কিন্তু কাশির চিকিৎসা করার পরও যদি উপশম না হয় তবে বুঝতে হবে ব্যাপারটি অন্যদিকে মোড় নিয়েছে। এটি ফুসফুস ক্যান্সারের অন্যতম লক্ষণ।
- গ্ল্যান্ড ফুলে যাওয়া: শরীরের যে কোন জায়গায় আচমকা যদি গ্ল্যান্ড ফুলে যায় তবে তা লিম্ফ্যাটিক সিস্টেম পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করে। এটি বর্তমানে ক্যান্সারের পূর্ব লক্ষণ হিসেবে চিহ্নিত।
- খাবার গিলতে অসুবিধা: আক্রান্ত ব্যক্তি যদি খাবার গেলার সময় অসুবিধা অনুভব করে তবে তা ফুসফুস ক্যান্সারের প্রথম ধাপ হিসাবে ধরা যেতে পারে।
- শ্বাসকষ্ট: অতিরিক্ত হাঁপানি এবং শ্বাসকষ্ট হলে বুঝবেন যে এটি ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষণ। দীর্ঘদিন শ্বাসকষ্ট স্থায়ী হলে বুঝতে শুরু করবেন আপনার ভেতরে ক্যান্সারের জীবাণু ভর করেছে।
- ওজন কমে যাওয়া: কোনো প্রকার ডায়েট অথবা শরীরচর্চা ছাড়াই যদি শরীরের ওজন অস্বাভাবিকভাবে কমে যেতে থাকে তবে বুঝতে হবে তা ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষণ।
- নখের রং পরিবর্তন: আপনার আঙ্গুলের নখের রং যদি পাল্টে যেতে থাকে, অস্বাভাবিক বাদামী-কালো রেখা দেখা যায় বা বিবর্ণ দেখা যায় তবে তাও ক্যান্সারের লক্ষণ।
- ক্ষুধা হ্রাস: রোগীর যদি ক্ষুধা কমে যায় এবং বুকে ক্রমাগত ব্যথা হতে থাকে তবে তা ফুসফুস ক্যান্সার ইঙ্গিত বহন করে।
- বমি ও রক্ত পড়া: ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে সাধারণত বমি বমি ভাব হতে পারে এবং বমি বা কাশির সাথে রক্ত যেতে পারে। আশা করি কিভাবে বুঝবেন আপনি ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন, তা এই লক্ষণগুলো থেকে বুঝতে পেরেছেন।
ফুসফুস ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায়
কিভাবে বুঝবেন আপনি ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন তা পোস্টে পূর্ববর্তী অংশ
থেকে জেনে নিয়েছেন। এবার আপনারা ফুসফুস ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায় গুলো জেনে
নিয়ে সে অনুযায়ী সচেতন হয়ে যান।
- ফুসফুস ক্যান্সার প্রতিরোধের সর্বপ্রথম প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে সকল প্রকার ধূমপান পরিত্যাগ করতে হবে। যদি প্রাথমিক অবস্থায় ধুমপান পরিত্যাগ করতে পারেন তবে ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বহু অংশে কমে যাবে।
- সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। তাজা ফলমূল, সবুজ শাকসবজি ও স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করতে হবে।
- যানবাহন, শিল্প কল-কারখানা থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে। প্রয়োজনে মাস্ক ব্যবহার করে চলাচল করতে হবে।
- যক্ষা, নিউমোনিয়া, অ্যাজমা, ব্রংকাইটিস ইত্যাদি হলে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। এ সকল রোগে আক্রান্ত হলে ফুসফুসের অনেক ক্ষতি হয় এবং আক্রান্ত স্থানে ক্যান্সার কোষ সৃষ্টি হয়।
- ক্রোমিয়াম, ক্যাডমিয়াম ইত্যাদি রাসায়নিক পদার্থ এড়িয়ে চলতে হবে। এসব জিনিস রয়েছে এমন পরিবেশে কর্মস্থল নির্ধারণ করা যাবে না।
- সর্বোপরি ফুসফুস ক্যান্সার প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সুস্থ জীবন যাপন করতে হবে।
উপসংহারঃ ফুসফুস ক্যান্সার মুক্ত নতুন জীবন
বন্ধুরা আপনারা যদি সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ে থাকেন তবে কিভাবে
বুঝবেন আপনি ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন, তার সব কৌশলসমূহ অবশ্যই জেনে
ফেলেছেন। এছাড়া পোস্টের শেষ অংশে আলোচিত ফুসফুস ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায় যদি
যথার্থভাবে মেনে চলেন তবে অবশ্যই ফুসফুস ক্যান্সার মুক্ত নতুন জীবন অতিবাহিত করতে
পারবেন। পোস্টটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন এবং স্বাস্থ্যবিধি বিষয়ক নিত্যনতুন পোস্ট
পড়তে চাইলে আমাদের সাথেই থাকুন। @23891