বিশ্ব মা দিবস পালনের ইতিহাস
বিশ্ব মা দিবস পালনের ইতিহাস, গুরুত্ব ও তাৎপর্য হয়তো অনেকের অজানা। প্রতিবছর
ক্যালেন্ডারে এই দিনটি আসে কিন্তু বিশ্ব মা দিবস পালনের ইতিহাস আর জানা হয়ে ওঠে
না। সুতরাং এই আর্টিকেলে আজ আপনাদের বিশ্ব মা দিবস পালনের ইতিহাস নিয়ে
গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করব। তাই বিশ্ব মা দিবস পালনের ইতিহাস জানতে গুরুত্ব সহকারে
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ুন।
বিশ্ব মা দিবস পালনের পেছনে এক সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে। এই পৃথিবীতে মা হলো আমাদের
সবচেয়ে বড় আপনজন। সুতরাং বিশ্ব মা দিবস পালনের ইতিহাস সম্পর্কে অবহিত হওয়া
সন্তান হিসাবে আমাদের সকলেরই কর্তব্য। একই সাথে মা দিবস কেন পালন করা হয় তার
ইতিহাসও জানা উচিত। আজ এই পোস্টটি পুরোটা মনোযোগ সহকারে পড়লে আপনারা বিশ্ব মা
দিবস পালনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য এবং বিশ্ব মা দিবস পালনের ইতিহাস সহ অন্যান্য
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো জেনে নিতে পারবেন।
পোস্ট সূচিপত্র - বিশ্ব মা দিবস পালনের ইতিহাস জেনে নিন
ভূমিকা - বিশ্ব মা দিবস কবে পালিত হয়?
প্রতিবছর যথাযথ ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে বিশ্বব্যাপী মা দিবস পালিত হয়ে থাকে।
বিশ্বের সকল মায়েদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এই দিবসটি প্রচলন করা হয়েছিল। একজন
মা তার সন্তানের প্রতি যে অকৃত্রিম ভালবাসা দেখায়, তাদের সেই আত্মদানের কথা
স্মরণ করেই সমগ্র বিশ্বে মা দিবস পালন করা হয়। এই দিবস চালু হওয়ার পিছে এক
বিস্তৃত ইতিহাস রয়েছে।
প্রতিবছর মে মাসের ২য় রবিবারে বিশ্ব মা দিবস পালন করা হয়। সে হিসেবে একেক বছর
একেক তারিখে বিশ্ব মা দিবস পালন করা হয়ে থাকে। কারণ মে মাসের ২য় রবিবার প্রতিবছর
ভিন্ন ভিন্ন তারিখে হয়ে থাকে। সে হিসাবে ২০২৪ সালের বিশ্ব মা দিবস পালিত হবে ১২
মে, রোজ রবিবার, ইং তারিখে। আমাদের দেশেও নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত
হয়।
বিশ্ব মা দিবস পালনের ইতিহাস | মা দিবস কেন পালন করা হয়
মা দিবস পালনের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় ১৯০৭ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্ব
মা দিবস আমেরিকার ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া প্রফটন শহরে পালিত হয়েছিল। তৎকালীন
ভার্জিনিয়ায় অ্যান নামে এক শান্তিকামী নারী সমাজ কর্মী বসবাস করতেন। তিনি নারী
অধিকার সমুন্নত রাখার জন্য সেখানে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড চালু করেন। এরকম উদার চিন্তা
ভাবনা থেকে তিনি মাদারস ডে ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি সেই ক্লাবে পিছিয়ে পড়া
নারীদের উন্নযয়ের জন্য কাজ শুরু করেন।
এই ক্লাবের অন্যতম উদ্দেশ্যে ছিল নারীদের স্বাবলম্বী করা ও অন্যান্য দেশের
নারীদের তুলনায় আমেরিকান নারীদের অধিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা। অ্যানের একটি মেয়ে
ছিল যার নাম আনা মারিয়া রিভস জার্ভিস। একদা অ্যান তার ছোট মেয়ের সামনেই
প্রার্থনার সুরে বলেছিলেন, "একদিন কেউ না কেউ মায়েদের জন্য একটি নির্দিষ্ট দিন
উৎসর্গ করুক। কারণ মায়েরা তাদের পুরো মনুষ্যত্ব দিয়ে প্রতিনিয়ত নিজেদের
সর্বোচ্চটা উজাড় করে দেয়। সুতরাং এটি তাদের অধিকার।"
মায়ের এমন চাওয়া মেয়ের হৃদয়ে ব্যাপকভাবে নাড়া দেয়। অতঃপর অ্যানের মৃত্যুর পরে
পৃথিবীর সকল মায়ের অধিকার রক্ষা ও তাদের শ্রদ্ধার সর্বোচ্চ জায়গায় রাখতে একটি
দিনকে মা দিবস হিসাবে উৎসর্গ করা হয়। পরবর্তীতে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন
১৯১৪ সালে মে মাসের ২য় রবিবারকে বিশ্ব মা দিবস হিসাবে ঘোষণা করেন। তার এই ঘোষণার
পর থেকে আজও সারা বিশ্বের অন্তত ৪০ টি রাষ্ট্রে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালিত
হচ্ছে। এটাই বিশ্ব মা দিবস পালনের ইতিহাস।
মা দিবসের জন্য উপহারের কিছু আইডিয়া
প্রিয় পাঠক আপনারা ইতোমধ্যে বিশ্ব মা দিবস পালনের ইতিহাস সম্পর্কে অবগত হয়েছেন।
চাইলে আপনারাও আপনার মাকে নিয়ে সুন্দর এই দিনটি পালন করতে পারেন। চলুন এবার মা
দিবসের জন্য কিছু উপহারের আইডিয়া সম্পর্কে জেনে নিই।
- মাকে খুশি করার জন্য তাজা ফুল দিতে পারেন। কারণ ফুল দিলে খুশি হয় না পৃথিবীতে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তাই দিবসের শুরুতেই মাকে একটি ফুল দিয়ে তার মুখের সুন্দর হাসি দেখার সাক্ষী হতে পারেন।
- মা দিবসে না হয় মায়ের পছন্দের কিছু খাবার নিজেই রান্না করে খাওয়ান। এতে করে মা অনেক খুশি হবে।
- অনেক সময় মায়েদের বাহিরে বেশি ঘুরতে যাওয়া হয় না। তাই সুন্দর এই দিবসটিতে মাকে নিয়ে দূরে কোথাও ঘুরতে যেতে পারেন। এতে তার মন অনেকটাই ভালো হয়ে যাবে।
- আপনার মায়ের পছন্দের বন্ধু ও আত্মীয়দের এদিন বাসায় নিমন্ত্রণ জানাতে পারেন। তাদের সাথে দেখা হয়ে সময় কাটালে আপনার মায়ের দিনটি অনেক সুন্দর যাবে।
- মায়ের সাথে একটি শিক্ষামূলক সুন্দর সিনেমা দেখতে পারেন। খেতে বসে সিনেমা দেখলে নিশ্চয়ই আপনার মা অনেক খুশি হবে।
- মায়ের সাথে বসে দীর্ঘ সময় গল্প ও আর মেতে উঠতে পারেন। সন্তানের কাছে যথেষ্ট সময় পেলে একজন মা এর চেয়ে বেশি খুশি আর হতেই পারেন না।
- এদিনে চাইলে আপনি মায়ের পছন্দের একটি শাড়ি অথবা তার পছন্দের কোন গিফট কিনে তাকে সারপ্রাইজ হিসাবে দিতে পারেন।
বিশ্ব মা দিবস পালনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য
সারা বিশ্বে মা দিবস বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে পালিত হয়। আমাদের দেশেও
বিভিন্ন সমাজিক সংগঠন নানা উদ্যোগে দিবসটি পালন করে থাকে। মা যেহেতু আমাদের
সবচেয়ে কাছের মানুষ, তাই মাকে কেন্দ্র করে পালিত হওয়া দিবসের অবশ্যই আলাদা
গুরুত্ব রয়েছে। এই দিবসের তাৎপর্য থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। মাকে হৃদয়ের গভীর
থেকে ভালোবাসতে হবে।
আপনারা বিশ্ব মা দিবস পালনের ইতিহাস জেনে নিয়েছেন। একটি শিশুকে ৯ মাস গর্ভে ধারণ
করার জন্য একজন মা অসীম ত্যাগ শিকার করে। একজন মা সারাজীবন যতটা মায়া, মমতা ও
নিঃস্বার্থ ভালবাসা দিয়ে সন্তানকে গড়ে তোলে এমন ভালোবাসা পৃথিবীতে আর কোথাও খুঁজে
পাওয়া যায় না। তাই বিশ্ব মা দিবস, আমাদের সকলের জন্য একটা বড় সুযোগ সৃষ্টি করে
যেন এই দিনটতে আমরা আমাদের প্রিয় মা কে নিয়ে স্পেশাল ভাবে উৎযাপন করতে পারি।
মা ও সন্তানের নাড়ির যে বন্ধন রয়েছে তা সব সময় অটুট থাকে। সন্তানের জন্য মায়ের
সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত এই অফুরন্ত ভালোবাসার কোনো তুলনা নেই। তাই আমাদের সকলের
বিশ্ব মা দিবস পালনে বেশ উদ্যোগী হওয়া দরকার। মা আমাদের যতটা ভালোবাসেন, তার
প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের জন্য তাই বিশ্ব মা দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম।
সুতরাং, আমরা এই দিবসে মাকে নিয়ে কিছু সুন্দর মুহুর্ত কাটাবো এই হোক আমাদের
প্রত্যাশা।
উপসংহার - বিশ্ব মা দিবস পালনের ইতিহাস
সুপ্রিয় পাঠক! আশা করি সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ে আপনারা বিশ্ব মা দিবস পালনের ইতিহাস,
গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে পুরোপুরিভাবে অবহিত হয়েছেন। একই সাথে মা দিবস পালনের
জন্য মাকে উপহার দেওয়ার মতো কিছু চমৎকার আইডিয়াও পেয়েছেন। অতএব আমরা আমাদের
মায়েদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে তাদের নিয়ে এই দিবসটি সুন্দরভাবে পালন করব। ভালো
থাকুক পৃথিবীর সকল মা এই প্রত্যাশায় বিশ্ব মা দিবসের মঙ্গল কামনা করে আজকের এই
পোস্ট এখানেই শেষ করছি। ধন্যবাদ। @23891