হিমোগ্লোবিন বেড়ে গেলে কি হয়
শরীরে হিমোগ্লোবিন বেড়ে গেলে কি হয় বা হিমোগ্লোবিন কম হলে কি হয় জানেন? হিমোগ্লোবিন আপনার সারা শরীরে অক্সিজেন বহন করতে সাহায্য করে। হিমোগ্লোবিন বেড়ে গেলে কি হয় ও হিমোগ্লোবিন কত হলে রক্ত দিতে হয় এটা জানা আমাদের সকলের জন্য খুব গুরুক্তপূর্ণ। হিমোগ্লোবিন বেড়ে গেলে কি হয় বা হিমোগ্লোবিন মানে কি জানতে পোস্টটি পড়ুন।
সাধারণত যারা ধূমপান করেন তাদের মধ্যে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বেশি দেখা যায়। ডিহাইড্রেশন হলে বা শরীরে পানি কমে গেলে কিছুক্ষণের জন্যে হিমোগ্লোবিন বেশি দেখায় কিন্তু এটা সঠিক ফলাফল নয় শরীরে পানির পরিমাণ স্বাভাবিক হয়ে গেলে এটা ঠিক হয়ে যায়। আজ এই পোস্ট থেকে আপনারা হিমোগ্লোবিন বেড়ে গেলে কি হয়ন এবং হিমোগ্লোবিন কম হলে কি হয় তা জানতে পারবেন।
সূচিপত্রঃ হিমোগ্লোবিন বেড়ে গেলে কি হয়
- হিমোগ্লোবিন বেড়ে গেলে কি হয়
- হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কিভাবে পরীক্ষা করা হয়?
- শরীরে হিমোগ্লোবিন বেড়ে যাওয়ার সবচেয়ে সাধারণ কারণ কি কি?
- কম হিমোগ্লোবিনের লক্ষণ
- কম হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বা রক্তাল্পতা
- শেষ কথা
হিমোগ্লোবিন বেড়ে গেলে কি হয়
শরীরে হিমোগ্লোবিন বেড়ে গেলে কি হয় বা হিমোগ্লোবিন কম হলে কি হয় জানেন? অনিয়মিতভাবে হিমোগ্লোবিন বেড়ে গেলে শরীরের রক্ত জমাট বাঁধতে পারে। তাই আপনার শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বেশি হলে তা খুব গুরুত্ব সহকারে নেওয়া উচিত। কখনও কখনও উচ্চ হিমোগ্লোবিন একটি খুব খারাপ রোগের লক্ষণ হতে পারে। হিমোগ্লোবিন বেড়ে গেলে যদি কোনো রোগ নাও হয় তবুও চিকিৎসা করা গুরুত্বপূর্ণ। অনিয়মিতভাবে উচ্চ হিমোগ্লোবিনের মাত্রা রক্ত জমাট বাঁধার মতো জটিলতার কারণ হতে পারে। তাই হিমোগ্লোবিন মানে কি এবং হিমোগ্লোবিন টেস্ট কি এসব আমাদের জানা উচিত।
এছাড়াও হিমোগ্লোবিন নরমাল রেঞ্জ থেকে বেড়ে গেলে পলিসাইথেমিয়া নামের একটি রক্তের রোগের লক্ষণ হতে পারে। পলিসিথেমিয়ার কারণে শরীর অনেক বেশি লোহিত রক্তকণিকা তৈরি করে, যার ফলে রক্ত স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ঘন হয়ে যায়। এর ফলে ক্লট, হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোক হতে পারে। হিমোগ্লোবিন নরমাল রেঞ্জ থেকে বেশি হলে একটি গুরুতর সমস্যা এবং এটা আজীবনের সমস্যা হতে পারে।
আরো পড়ুনঃ সজল নামের অর্থ কি - সজল নামের বিখ্যাত ব্যক্তি
ডিহাইড্রেশন, ধূমপান এর কারণেও হিমোগ্লোবিন বেড়ে যেতে পারে। এটি ফুসফুস বা হৃদরোগের মতো অন্যান্য সমস্যার কারণও হতে পারে। তাই শরীরে রক্ত কম হওয়াও ঠিক না আবার খুব বেশি হওয়াও ঠিক না। এখান থেকে আমরা হিমোগ্লোবিন বেড়ে গেলে কি হয় বা হিমোগ্লোবিন মানে কি। হিমোগ্লোবিন কমানোর উপায় হল ব্যায়াম করা, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং নিয়ম মেনে চলা।
হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কিভাবে পরীক্ষা করা হয়?
হিমোগ্লোবিন টেস্ট কি তা হল রক্ত পরীক্ষা। রক্ত পরীক্ষা করার মাধ্যমে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা জানা যায়। একে হিমোগ্লোবিন টেস্ট বলা হয়। ডাক্তাররা মানুষের শরীর থেকে রক্তের নমুনা নিয়ে তা পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কত তা জানতে পারে। রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কম মানে অক্সিজেনের মাত্রাও কম। এর ফলে অ্যানিমিয়া নামের রোগ হতে পারে।
জানেন হিমোগ্লোবিন কম হলে কি হয় বা হিমোগ্লোবিন কত হলে রক্ত দিতে হয় যখন পরীক্ষায় হিমোগ্লোবিনের মাত্রা পুরুষদের মধ্যে 13.5 g এবং মহিলাদের মধ্যে 12.0 g এর কম হয় তখন ডাক্তাররা রক্তাল্পতা বলে নির্ণয় করতে পারেন। আর তখন রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। শিশুদের জন্য হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বয়সের সাথে পরিবর্তিত হতে পারে। এখান থেকে হিমোগ্লোবিন টেস্ট কি এবং হিমোগ্লোবিন নরমাল রেঞ্জ কত তা জানা যায়।
শরীরে হিমোগ্লোবিন বেড়ে যাওয়ার সবচেয়ে সাধারণ কারণ কি কি?
অনেক সমস্যার কারণে শরীরে হিমোগ্লোবিন বেড়ে যেতে পারে। হিমোগ্লোবিন আমাদের রক্তের প্রধান উপাদান গুলোর মধ্যে একটি। আমাদের শরীরে কোথাও কেটে গেলে হিমোগ্লোবিনের জন্য রক্ত জমাট বেঁধে রক্ত পড়া বন্ধ হয়। কিন্তু হিমোগ্লোবিন বেড়ে গেলে কি হয় জানেন শরীরে রক্ত জমাট বেঁধে জেতে পারে। তাই শরীরে রক্ত চলাচলে সমস্যা হতে পারে।
আরো পড়ুনঃ নিঃশ্বাস আটকে যাওয়ার কারণ - শ্বাসকষ্ট হলে করণীয়
আপনার যদি কোন রোগ থাকে তাহলে তার কারণে হিমোগ্লোবিন বেড়ে যেতে পারে যেমনঃ
- ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি রোগের এর কারণে
- জন্মগত ভাবে হৃদরোগ থাকলে
- এমফিসেমা হলে
- কিডনির ক্যান্সার এর কারণে
- লিভার ক্যান্সার হলে
- পলিসিথেমিয়া ভেরা।
- পালমোনারি ফাইব্রোসিস এর কারণে
হিমোগ্লোবিন বেড়ে যেতে পারে এমন অন্যান্য কারণগুলির মধ্যে রয়েছেঃ
- কার্বন মনোক্সাইড এক্সপোজার
- পানিশূন্যতা
- অ্যানাবলিক স্টেরয়েড বা এরিথ্রোপয়েটিন-উত্তেজক এজেন্টের মতো ওষুধ খেলে
- ধূমপান করলে
কম হিমোগ্লোবিনের লক্ষণ
রক্তে হিমোগ্লোবিন বেশি হলেও সমস্যা এবং কম হলে আরো বেশি সমস্যা হতে পারে। তাই হিমোগ্লোবিন এর সঠিক মাত্রা থাকা খুব গুরুক্তপূর্ণ। হিমোগ্লোবিন কত হলে রক্ত দিতে হয় তা হল পুরুষদের মধ্যে 13.5 g এবং মহিলাদের মধ্যে 12.0 g হলে।
কম হিমোগ্লোবিনের সাধারণ লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছেঃ
- দুর্বলতা
- নিঃশ্বাসের দুর্বলতা
- মাথা ঘোরা
- দ্রুত, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন
- কানে ধাক্কাধাক্কি
- মাথাব্যথা
- ঠান্ডা হাত এবং পা
- ফ্যাকাশে বা হলুদ ত্বক
- বুক ব্যাথা
কম হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বা রক্তাল্পতা
উপরে জেনেছি হিমোগ্লোবিন বেড়ে গেলে কি হয়। শরীরে কম হিমোগ্লোবিনের মাত্রা সাধারণত বোঝায় যে একজন ব্যক্তির রক্তস্বল্পতা রয়েছে। বিভিন্ন ধরণের রক্তাল্পতা রয়েছে নিচে দেখুনঃ
আয়রন-ঘাটতি রক্তাল্পতাঃ এটি সবচেয়ে সাধারণ রক্তাল্পতা এটা তখনই দেখা দিতে পারে যখন একজন ব্যক্তির শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ আয়রন থাকে না এবং শরীর প্রয়োজনীয় হিমোগ্লোবিন তৈরি করতে পারে না। কম হিমোগ্লোবিনের কারণে রক্ত জমাট বাঁধে না ফলে রক্ত পড়া বন্ধ হয় না।
গর্ভাবস্থা-সম্পর্কিত রক্তাল্পতাঃ এটি এক ধরনের আয়রনের অভাবজনিত রক্তাল্পতা এটা গর্ভাবস্থার সময় হয়ে থাকে। কারণ গর্ভাবস্থা এবং প্রসবের সময় অনেক পরিমাণে আয়রনের প্রয়োজন হয়।
ভিটামিনের অভাবজনিত রক্তাল্পতাঃ যখন কোনও ব্যক্তির শরীরে ভিটামিন বি 12 বা ফলিক অ্যাসিড এর মতো পুষ্টির মাত্রা কমে যায়। এই ভিটামিনের অভাবজনিত রক্তাল্পতাগুলি লাল রক্ত কোষের আকার পরিবর্তন করে ফলে রক্তের কার্যকারিতা কমে যায়।
অ্যাপ্লাস্টিক রক্তাল্পতাঃ এটি এমন একটি রোগ যেখানে ইমিউন সিস্টেম অস্থি মজ্জাতে রক্ত গঠনকারী কোষকে আক্রমণ করে যার ফলে রক্তে কম লোহিত রক্তকণিকা তৈরি হয়।
হেমোলাইটিক রক্তাল্পতাঃ রক্ত প্রবাহে বা প্লীহায় লোহিত রক্তকণিকা ভেঙ্গে গেলে এই সমস্যা হতে পারে। তবে এটা ভালো যে হিমোগ্লোবিন বেড়ে খুব সহজে হিমোগ্লোবিন কমানোর উপায় আছে।
আরো পড়ুনঃ সম্পত্তি কাকে বলে - সম্পত্তি কি
সিকেল সেল রক্তাল্পতাঃ এই সমস্যা কিছু জেনেটিক কারণে হয়ে থাকে যেখানে হিমোগ্লোবিন প্রোটিন অস্বাভাবিক থাকে। এর অর্থ হল লাল রক্তকণিকাগুলি অন্য আকৃতির যা তাদের ছোট রক্তনালীগুলির মধ্য দিয়ে যেতে পারেনা।
অন্যান্য কিছু রোগের কারণে যেমন কিডনি রোগ এবং ক্যান্সারের জন্য কেমোথেরাপির ফলে রক্তাল্পতা হতে পারে যখন এগুলো শরীরের লাল রক্তকণিকা তৈরির ক্ষমতাকে কমিয়ে দেয় তখন রক্তাল্পতা দেখা দিতে পারে।
হিমোগ্লোবিন বেড়ে গেলে কি হয় - শেষ কথা
রক্তে প্রোটিনের মাত্রা বেড়ে গেলে হিমোগ্লোবিনও বেড়ে যেতে পারে। রক্তের প্রোটিন ও হিমোগ্লোবিন আপনার সারা শরীরে অক্সিজেন পাঠাতে সাহায্য করে এবং আপনার ফুসফুসে কার্বন ডাই অক্সাইড পৌছে দেয়। রক্তে হিমোগ্লোবিন বেড়ে গেলে মাথা ঘোরা, ক্লান্তি, সহজ ব্যথা বা ক্ষত এবং অন্যান্য সমস্যা হতে পারে। উপরে হিমোগ্লোবিন বেড়ে গেলে কি হয় এবং হিমোগ্লোবিন কম হলে কি হয় তা আলোচনা করা হয়েছে। [জব আইডি=২২৪৯৮]